সরওয়ার কামাল
একসময় সবুজে ঘেরা মহেশখালী আজ বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। শিল্পায়নের নামে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে মাতারবাড়ি আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, যা পরিবেশ ও মানব জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ উন্নত বিশ্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আর আমাদের দেশে সেগুলোই নতুন করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারী বিকালে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের আঁধারঘোনা গ্রামে আয়োজিত মরহুম এমরানুল হক ইমুর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে “স্মরণ সভা ও ইমু স্মৃতি মেধা বৃত্তি” প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন দেশবরেণ্য চিন্তাবিদ ও লেখক ড. সলিমুল্লাহ খান। জন্মভূমির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি মহেশখালীর অব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত সংকট ও উন্নয়নবঞ্চিত অবস্থার বিষয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেন।
মহেশখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভয়াবহ উল্লেখ করে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি ফেরিঘাট স্থাপনের দাবি উঠলেও সিন্ডিকেটের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। একসময় কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে চেয়ার ও ছাউনিযুক্ত লঞ্চ চলাচল করত, কিন্তু স্পিডবোট মালিকদের স্বার্থরক্ষায় সেই সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি জেলা প্রশাসকও এই সিন্ডিকেটের সামনে অসহায়।
তিনি আরও বলেন, নৌউপদেষ্টার মতে, এই নৌপথে একসময় লঞ্চ চলাচল করত, মন্ত্রানালয়ের নথিতে সেই বিষয়ে কোন তথ্য নাই। অর্থাৎ, পরিকল্পিতভাবে তথ্য গোপন করে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার করা হচ্ছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হেদায়েত উল্যাহকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাটে উভয় পাশে কেন পন্টুন থাকবে না? পূর্ববর্তী সরকারের সময় নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ একটি পন্টুন দিয়েছিল, যাতে মানুষ কাদায় নেমে পার হতে না হয়। কিন্তু প্রভাবশালী মহল সেটি নদীতে ফেলে দিয়েছে এবং সরকার কিছুই করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সন্তানরা যদি সঠিকভাবে শিক্ষিত হয়, তবে ভবিষ্যতে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।”
বদিউদ্দিন-মুজিব আনন্দধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রাজিন সালেহ ও হানিফ নোমানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি, কবি ও সাংবাদিক রুহুল কাদের বাবুল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. এহসানুল হক কাজল, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসহাক এবং অধ্যাপক ড. জাহিদুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শেষে মহেশখালীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে মেডেল ও সনদ প্রদান করা হয়।